সন্তানের জন্য বোধগম্য ও তার বয়স উপযোগী ভাষা ব্যবহার করুন

রচনা ও তথ্য: Toma Islam

October 27, 2024

শিশুদের সঙ্গে কথা বলার সময় সহজ, মিষ্টি এবং সংক্ষিপ্ত ভাষা ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে তারা সহজে বুঝতে পারে এবং কথোপকথনে মনোযোগী হয়। বয়স অনুযায়ী শিশুদের সঙ্গে কথা বলার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:

১. সহজ এবং স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করুন

  • ছোট ও সাধারণ শব্দ দিয়ে কথা বলুন। শিশুদের জটিল শব্দ বোঝা কঠিন হতে পারে, তাই সহজ শব্দ বেছে নিন।
  • যেমন: “বসে থাকো”, “চলো খাই”, “এখানে আসো”।

২. সংক্ষিপ্ত বাক্য ব্যবহার করুন

  • শিশুদের মনে রাখতে সুবিধা হয়, তাই ছোট বাক্য ব্যবহার করুন।
  • যেমন: “তোমার খেলনা নাও”, “মা আসছে”, “বাইরে চল”।

৩. মিষ্টি এবং মনোযোগী সুরে বলুন

  • কথা বলার সময় সুর মধুর এবং শান্ত রাখুন। এতে শিশু মনোযোগ দেয় এবং খুশি হয়।

৪. নাম ধরে সম্বোধন করুন

  • শিশুর নাম ধরে কথা বললে সে বেশি মনোযোগী হয়।
  • যেমন: “রাফি, তুমি খেলতে চাও?”, “আয়ান, এটা তোমার বই।”

৫. প্রশ্ন করুন এবং সাড়া পাওয়ার জন্য সময় দিন

  • তাকে প্রশ্ন করুন এবং সাড়া দেওয়ার জন্য সময় দিন। যেমন: “তুমি কেমন আছো?”, “তুমি এটা পছন্দ করো?”
  • উত্তর দিতে একটু সময় নেবে—তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।

৬. চোখের সমান উচ্চতায় এসে কথা বলুন

  • শিশুর চোখের উচ্চতায় বসে কথা বললে সে বুঝতে পারে আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যা তাকে কথা বলায় উৎসাহিত করে।

৭. কথা বলার সময় অঙ্গভঙ্গি ও মজাদার শব্দ ব্যবহার করুন

  • শিশুদের জন্য অঙ্গভঙ্গি (যেমন হাত নাড়া, মুখভঙ্গি) বা মজাদার শব্দ করা আনন্দদায়ক হতে পারে। যেমন: “ওহ!”, “ওয়াও!”, “ইয়ে!”

শিশুর সঙ্গে কথা বলার সময় ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে ধীরে ধীরে তার বোঝার ক্ষমতা এবং ভাষা দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করুন।

——————————————————————————————

সন্তানের সঙ্গে আপনার প্রতিটি মিথস্ক্রিয়াই যোগাযোগের একটি রূপ। এটি শুধু আপনি যেসব কথা বলেন তাই নয়, আপনার কন্ঠস্বর, চাহনি, আলিঙ্গন, চুম্বন – সবকিছুই আপনার সন্তানকে কিছু না কিছু বার্তা দেয়। আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ করেন, তা কেবল তাদের শেখায় না যে কীভাবে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়, এটি তাদের আবেগেরও বিকাশ ঘটায় এবং কীভাবে তারা পরবর্তী জীবনে সম্পর্ক তৈরি করবে সেটিও নির্ধারণ করে দেয়।

 

যোগাযোগের ধরণগুলো কী কী?

দুই ধরনের যোগাযোগ হতে পারে পারে: বাচনিক ও অবাচনিক অর্থাৎ কথার মাধ্যমে ও কথা ছাড়া।

বাচনিক যোগাযোগের অন্তর্ভুক্ত হলো-

  • শব্দ ও কণ্ঠস্বর
  • আপনি যেসব কথা বলেন
  • উপভাষা বা শব্দ, যা আপনার সন্তান ভালো বুঝতে পারে।

অবাচনিক যোগাযোগ হল, শারীরিক ভাষার মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত উভয় ধরনের যোগাযোগ। এরমধ্যে রয়েছে-

  • মুখের অভিব্যক্তি
  • চোখে চোখে ভাব বিনিময়
  • ব্যক্তিগত সান্নিধ্য কিংবা দূরত্ব
  • হাতের ইশারা
  • শারীরিক স্পর্শ, যেমন আলিঙ্গন

আপনার বাচনিক ও অবাচনিক যোগাযোগ দক্ষতা অনুশীলনে এই নয়টি কৌশল (টিপস) চেষ্টা করুন-

১. সক্রিয় শ্রোতা

সক্রিয় শ্রোতা হওয়া শিশুদেরকে যে কোন বিষয় শোনা ও বোঝার বিষয়টি অনুভব করতে সাহায্য করে। হাসি বা উৎসাহিত করার মতো অঙ্গভঙ্গি করে এবং সম্মতি জানানোর মাধ্যমে আপনি দেখাতে পারেন, সন্তান যা বলছে আপনি তা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন, তার সাথে  ঐক্যমত পোষণ করছেন এবং এ ব্যাপারে আপনি সত্যিই যত্নশীল। শিশু আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় আপনিও তার দৃষ্টির সাথে  দৃষ্টি মেলালে সেটি তার মধ্যে নিরাপদ বোধ তৈরি করে ও আপনার সঙ্গে তার অধিকতর সংযুক্তি তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।

‘কী?’কেন?’ এবং ‘কিভাবে’-এর মতো প্রশ্নগুলো করার মাধ্যমে দেখানো যে, তারা যা বলতে চায় তা আপনি মনোযোগের সাথে শুনছেন। তাছাড়া, এধরণের প্রশ্নগুলো কীভাবে একটি গল্প বলতে হয় এবং কী কী বিবরণ তাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, তা শিখতে শিশুদের সাহায্য করবে এবং তাদের নিজস্ব যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

২. প্রতিফলিত শ্রবণ

আপনার সন্তানকে দেখানোর একটি দুর্দান্ত উপায় হলো, আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং তাদের যা বলার তার প্রতি আপনি যত্নবান, সেটি আয়নার মতো করে তাদেরকে বুঝানো। তারা আপনাকে যা বলে, বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে তার পুনরাবৃত্তি করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সন্তান যদি বলে, ‘আমি আর মার্কোর সঙ্গে খেলছি না,’ আপনি উত্তরে বলতে পারেন, ‘তুমি তোমার বন্ধুর সঙ্গে খেলছো না?’ এটি বিচার ছাড়াই আপনার সন্তানকে তার আবেগ প্রকাশ করার জায়গা করে দেবে। আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন যে, তাদের কত কথা বলার আছে!

৩. স্পষ্টভাবে কথা বলা

আপনার সন্তানের জন্য বোধগম্য ও তার বয়স উপযোগী ভাষা ব্যবহার করুন। স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করুন। অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করবেন না। সহানুভূতিশীল ভাষা (কাইন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ) ব্যবহার আপনার সন্তানের জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপনে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, আলাপচারিতায় আপনার ছোট্ট সন্তান যেন নিজেকে সম্মানিত বোধ করে, ভালোবাসা অনুভব করে।

৪.ঘুষ এড়িয়ে চলুন

মৌলিক আচরণের জন্য টফি বা ক্যান্ডির মতো পুরষ্কার দেওয়ার ঘটনায় মনে হতে পারে সেটি আপনাকে সন্তানদের ওপর স্বল্পমেয়াদী নিয়ন্ত্রণ দেয়। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা আপনাকে স্পষ্ট সীমানা তৈরি করতে দেয়না। এটি আপনার ও আপনার সন্তানের মধ্যে অবিশ্বাসেরও কারণও হয়ে উঠতে পারে। আপনার সন্তান কেমন আচরণ করুক আপনি চান, সে সম্পর্কে তাদের মধ্যে স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা তৈরির চেষ্টা করুন। ভাল আচরণ দেখলে আপনি তার প্রশংসা করুন এবং প্রয়োজনমত আরও ভাল আচরণের জন্য তাদেরকে অনুপ্রাণিত করুন।

৫. অনুভূতির ব্যাখ্যা

আপনার সন্তানের মানসিক বুদ্ধিমত্তা বিকাশে সহায়তা করার জন্য, অনুভূতির নাম কীভাবে রাখতে হয় তা শেখা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিশু যখন তার অনুভূতি মৌখিকভাবে প্রকাশ করে, তখন তার আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে এবং কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই তা শুনুন। তাদের চোখ দিয়ে জীবন কেমন দেখায় তা বুঝতে চেষ্টা করুন। যদি আপনার ছোট্ট সন্তান তার অনুভূতিগুলো অবাচনিক উপায়ে প্রকাশ করে – যেমন, মেজাজ খারাপ করে কিংবা ক্ষেপে যায় বা হাসতে থাকে অথবা মজা করে এমন কিছু করে যা সে উপভোগ করে – তবে তাকে সেই  অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করুন। যেমন – খুশি হওয়া, দুঃখ পাওয়া, স্বস্তি, আঘাত পাওয়া, ভয় পাওয়া, ক্ষুধার্ত, গর্বিত হওযা, ঘুম পাওয়া, রাগান্বিত হওয়া, অসহায় বোধ এবং বিরক্ত, বিব্রত ও আনন্দিত হওয়ার অনুভূতি তাদের প্রকাশ করতে দিন।

৬. ‘সচেতনভাবে লক্ষ্য করার’ ভাষা ব্যবহার

আপনি যখন নির্দিষ্ট কাজের জন্য আপনার সন্তানের প্রশংসা করেন, তখন সেটি তাদের নিজেদের সম্পর্কে ভালো বোধ করতে সাহায্য করে এবং আপনি কোন আচরণ পছন্দ করেন তারা তা বুঝতে পারে। ‘ভাল কাজ!’ বলার পরিবর্তে, ‘লক্ষ্য করা’র (নোটিসিং স্টেটমেন্ট) কথা বলে আরও সুনির্দিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন — ‘আমি লক্ষ্য করেছি, খেলার পর তুমি তোমার সব খেলনা গুছিয়ে রেখেছো। চমৎকার কাজ!’

৭. একসঙ্গে মজা করা

আপনার সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকত্ব আরও কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে। এ কারণেই একসঙ্গে মজা করা এবং হালকা কথোপকথন উপভোগ করা গুরুত্বপূর্ণ – এটি সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক শক্তিশালী করার একটি দারুণ উপায়! যে বিষয়ে আপনার সন্তান যত্নশীল, সে বিষয়ে ইতিবাচক কিছু বলে, তাদের আগ্রহের দিকে মনোযোগ দিয়ে অথবা একসঙ্গে মজা করে আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার উপায়গুলো খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন, আপনার সন্তানের সঙ্গে হাসুন; কিন্তু তাকে উপহাস করে হাসবেন না।

৮. আচরণের দিকে মনোনিবেশ করা

আপনি যদি কোন কিছু নিয়ে আপনার সন্তানের ওপর বিরক্ত হন, তবে নিশ্চিত করুন যে, আপনার সমালোচনা ও মন্তব্য তাদের আচরণ সম্পর্কে, কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তার নিজের সম্পর্কে নয়। উদাহরণস্বরূপ, ‘তুমি অগোছালো, আমি এটা পছন্দ করিনা’ এমন কথা বলার পরিবর্তে বলার চেষ্টা করুন, ‘তুমি যখন মেঝে জুড়ে কাপড় ফেলে রেখে যাও, তখন আমি তা পছন্দ করি না।’

৯. দৃষ্টান্তের সঙ্গে নেতৃত্ব দেয়া

আপনি কী উদাহরণ স্থাপন করছেন তা বিবেচনা করুন। সন্তানের কাছে বাবা-মাই পৃথিবীতে প্রথম আত্মীয়। আপনার সন্তান আপনাকে যা করতে দেখেছে তা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ সে আপনাকে যা বলতে শুনেছে।

সন্তানকে শুধু এমন প্রতিশ্রুতিই দিন যেটা  আপনি নিশ্চিতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবেন। এটি আপনার ও আপনার সন্তানের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং সেটা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

মনে রাখবেন, আপনার সন্তানের সঙ্গে বন্ধন তৈরি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবসময় সহানুভূতি এবং ভালবাসার সাথে নেতৃত্ব দিতে হবে!

 

আরও থাকছে…

No Results Found

The page you requested could not be found. Try refining your search, or use the navigation above to locate the post.