চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশু, কিশোরী ও মা অপুষ্টির শিকার।
অপর্যাপ্ত সেবা ও বারবার সংক্রমণের প্রভাব এবং সেইসাথে শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিন যেমন ডিম, মাছ, মাংস এবং ডাল থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে অপুষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এটি বৃদ্ধি এবং বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে মানুষকে প্রতিবন্ধীত্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই অবস্থাটি “খর্বকায়” নামে পরিচিত। অপুষ্টির কারনে অনেকে বেশিমাত্রায় পাতলা হয়ে যেতে পারে, যা “কৃশকায়” নামে পরিচিত। অপুষ্টির অন্য পিঠে রয়েছে, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জীবনকে এটি ক্রমবর্ধমান হারে ব্যাহত করছে।
বাংলাদেশে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৮ শতাংশ খর্বকায় এবং ১০ শতাংশ কৃশকায়তায় ভোগে। যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং তাদের অন্যান্য রোগের সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। তারা প্রায়শই একাগ্রতার সমস্যায় ভোগে এবং কোনো কিছুতে বেশি মনোযোগ দিতে পারে না। একারনে তাদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিছু শিশুর অন্যদের তুলনায় অপুষ্টির ঝুঁকি বেশি থাকে। শহরের বস্তিতে, চা বাগানে বা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে, দরিদ্র পরিবারে এবং অশিক্ষিত মায়েদের ঘরে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাদের খর্বকায় এবং কৃশকায় হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ নারী ও মেয়ের বিয়ে হয় । বাল্যবিবাহের উচ্চমাত্রার ফলে পরিণত বয়সের আগে গর্ভধারণের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। অকালে গর্ভাধারণের ফলে প্রায়ই কম ওজনের শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা থাকে। এই হার বাংলাদেশে এখনও ১৫ শতাংশের বেশি।
জন্মের প্রথম ঘন্টার মধ্যে নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সুপারিশ করা হয়। তবে বাংলাদেশে জন্মের প্রথম ঘন্টার মধ্যে নবজাতকদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার মাত্র ৪৭ শতাংশ। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৬৩ শতাংশ শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করে। এছাড়া ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ পযা©প্ত সুষম খাদ্য পায়। পরিবারগুলো হয় অতি দারিদ্র অথবা অজ্ঞতার কারণে জানেনা কীভাবে তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য দিতে হয়। কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশু এবং নবজাতক ও ছোট শিশুদের সুষম খাদ্য অভ্যাসের অপর্যাপ্ততার সংমিশ্রণে শিশুদের খর্বকায় এবং কৃশকায় হয়ে বেড়ে ওঠার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
অনুপুষ্টির ঘাটতি এখনও ছোট শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে বিবেচিত হয়। মা এবং তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য মায়ের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও বাংলাদেশে গর্ভবতী কিশোরীদের মধ্যে দুই শতাংশেরও কম স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট গ্রহণ করে।
উন্নত পুষ্টি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি। খর্বকায় রোগ দেশের ভবিষ্যত এবং অর্থনীতির কাঠামো সুদৃঢ় করতে প্রয়োজনীয় ‘ধূসর পদার্থের অবকাঠামো’ কিংবা মস্তিষ্কের বিকাশকে ব্যাহত করে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হলে তা সারাজীবন মানব উন্নয়নে সহায়তা করে, মানসিক ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়, এবং প্রতি এক ডলার বিনিয়োগের বিপরীতে ১৬ ডলারের সমান রিটার্ন পাওয়া যায়। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ার সাথে পুষ্টি সংযুক্ত: মাথাপিছু আয় প্রতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধির হলে কৃশকায়তার প্রবণতা আনুমানিক ৩.২ শতাংশ হ্রাস পায়। এছাড়াও, মাথাপিছু আয়ের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে খর্বকায় হওয়ার প্রবণতা ৭.৪ শতাংশ কমে যায়।
——-
শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করার পর আমার কি বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া উচিত?
আপনার অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে। বর্তমানে এটি সুপারিশ করা হয় যে, বুকের দুধ খাওয়ানো কমপক্ষে দুই বছর এবং সম্ভব হলে এমনকি তারপরও যেন অব্যাহত রাখা হয়। এক অর্থে, বুকের দুধ এবং বুকের দুধ যে পুষ্টি সরবরাহ করে তা শিশুদের জন্য ভালো পুষ্টির ভিত্তি। আর প্রথম খাবারগুলো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অভাব পূরণ করে, যা শিশুর শরীর ও মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন।
বিকাশমান মস্তিষ্কের জন্য ভালো পুষ্টি প্রয়োজন। তাই প্রথম খাবারের মাধ্যমে আমরা যা অর্জন করি তা আসলে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করার জন্য সেই পুষ্টি নিয়ে আসে। শিশুদের জীবনের প্রথম কয়েক বছরে তাদের খাওয়ানোর জন্য বাবা-মায়েরা অনেক সময় ব্যয় করেন। খাওয়ানোর মুহূর্তগুলো খেলার সুযোগ এবং ভালবাসা প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়। এই মুহূর্তগুলো ভাষা শেখারও সুযোগ তৈরি করে। বাবা-মায়েরা শিশুদের খাওয়ানোর সময় তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের সঙ্গে খাবার নিয়ে কথা বলেন। প্রথম খাবার শুধু মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টির বিষয় নয়। এটি পুষ্টি, খেলা, ইতিবাচকতাকে একত্রিত করার সুযোগ তৈরি করারও বিষয়, যে বিষয়গুলো, আমরা জানি যে, শিশুর মস্তিষ্ককে খুব ভালোভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।