গর্ভাবস্থায় আপনার প্রথম তিনমাসের নির্দেশিকা

অভিনন্দন – আপনি মা হতে চলেছেন! বাবা বা মা হওয়া একটি রোমাঞ্চকর এবং ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা। তবে মাঝে মাঝে এটিকে অপ্রতিরোধ্য মনে হতে পারে এবং আপনার মনে সম্ভবত অনেক ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। এটা প্রত্যাশিত এবং গর্ভাবস্থায় এই নির্দেশিকাটি আপনার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগী হবে বলে আমরা মনে করি। গর্ভাবস্থার প্রথম ১৩ সপ্তাহ সময় আপনার শরীর ক্রমশঃ বাড়তে থাকবে এবং পরিবর্তিত হবে। ঠিক একইভাবে আপনার সন্তানের ক্ষেত্রেও এমনটি হবে। আপনারা যেহেতু একসাথে এই আশ্চর্যজনক যাত্রা শুরু করেছেন, সেহেতু যেসব বিষয় আপনাকে জানতে হবে সেগুলো এখানে রয়েছে।

আপনি কেমন বোধ করছেন

আপনার শরীরের ভেতরে নতুন একটি জীবন বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আপনার শরীরে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।

বমি-বমি ভাব বা ক্লান্তির মতো উপসর্গগুলো আপনি অনুভব করা শুরু করতে পারেন – বা আপনার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে এমনটিও আপনি অনুভব করতে পারেন! আপনার শরীরের ভাষা শুনুন এবং প্রয়োজন অনুসারে আপনার রুটিন পরিবর্তন করুন। প্রতিটি নারী যেমন আলাদা, একই ভাবে প্রতিটি গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতাও আলাদা।

 

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ এবং উপসর্গসমূহ 

নিয়মিত ঋতুচক্র (মাসিক) হয় এমন নারীদের জন্য ঋতুচক্র (মাসিক) হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া হ’ল গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণ ।কখনও কখনও রক্তস্রাব হতে পারে। এতে হাল্কা ঋতুচক্র (মাসিক) বা দাগ কাটার মতো রক্ত দেখা যায়। তবে এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এমন রক্তস্রাব দেখতে পান, তবে আপনার অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ক্লান্তি, বমি-বমি ভাব বা ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো নিচের কিছু লক্ষণ আপনার ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। 

 

সাধারণ লক্ষণ

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের সপ্তাহগুলোতে হরমোনের পরিবর্তন আপনার পুরো শরীরকে প্রভাবিত করবে। যদিও দুটি গর্ভাবস্থা কখনই একরকম নয়, তবে প্রথম তিন মাস আপনি কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

  • স্তন নরম হয়ে যাওয়া
  • মেজাজে চরম পরিবর্তন হওয়া
  • বমি-বমি ভাব বা বমি (প্রভাতকালীন অসুস্থতা)
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
  • চরম ক্লান্তি বোধ হওয়া
  • মাথাব্যথা করা
  • বুকজ্বালা করা
  • পায়ে খিল ধরা
  • পিঠের নিচের অংশ এবং শ্রোণীতে ব্যথা হওয়া
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হওয়া
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি নতুন করে অপছন্দ তৈরি হওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া

 

নিজের যত্ন

গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের লক্ষণগুলো, বিশেষ করে বলতে গেলে, অস্বস্তিকর হতে পারে। কিছুটা স্বস্তির জন্য, প্রথমে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যাচাই করার পরে এই কৌশলটি ব্যবহার করে দেখুন। মনে রাখবেন, অগ্রাধিকার এবং হাতের কাছে যে জিনিসগুলো সহজলভ্য আপনার সিদ্ধান্তটি সবসময় তার ভিত্তিতেই নেয়া উচিত।

  • বমি-বমি ভাব বা বমির ক্ষেত্রে আদা, কেমোমিল, ভিটামিন বি৬ এবং/বা আকুপাংচার করার চেষ্টা করুন।
  • পায়ে খিল ধরার ক্ষেত্রে ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়াম নিয়ে দেখতে পারেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ অনুসারে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেও যদি কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে স্বস্তি পেতে গমের তুষ বা অন্যান্য ফাইবার জাতীয় সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার করা যেতে পারে।

আপনার পুরো গর্ভাবস্থার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ আপনি এটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, ততক্ষণই আপনার দৈনিক শারীরিক কার্যক্রম চালিয়ে যান। গর্ভাবস্থায় আপনি যত বেশি সক্রিয় থাকবেন, আপনার পরিবর্তিত শরীরের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া ততটাই সহজ হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনার এবং আপনার সন্তানের ক্রমবর্ধমান শরীরের পুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করুন। শাকসবজি, মাংস, শিম, বাদাম, পাস্তুরিক্রিত দুধ এবং ফলমূল সহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি যে পর্যাপ্ত শক্তি, আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করুন।

আপনার সন্তানের বৃদ্ধি ঘটছে কীভাবে

এই সময়টি আপনার সন্তানের বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।  প্রথম তিন মাসে আপনার সন্তানের শরীর আকার নিতে শুরু করে। এসব প্রাথমিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং শারীরিক বিকাশের মধ্যে রয়েছে:

  • মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড
  •  কানের ভেতরের অংশ
  • কার্ডিয়াক টিস্যু
  • যৌনাঙ্গ
  • আঙ্গুলের নখ
  • যকৃৎ
  • চোখের পাতা
  • অগ্ন্যাশয়
  • কিডনি
  • হাত, পা এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোর জন্য কার্টিলেজ
  • মুখ, চোখ এবং নাকের পেশী
  • আঙুল এবং পায়ের আঙ্গুল
  • শ্বাসতন্ত্র

ভ্রূণের বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে প্রথম তিনমাসের সময়, প্রথম মাসের শেষে আপনার সন্তান প্রায় ০.৬৪ সেন্টিমিটার (০.২৫ ইঞ্চি) [(চালের দানার চেয়ে ছোট)] লম্বা হবে এবং ১২ সপ্তাহের শেষে এটি বেড়ে প্রায় ১০ সেন্টিমিটার (৪ ইঞ্চি) হবে ও ওজন হবে ২৮ গ্রাম  [ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে প্রাপ্ত তথ্য]। আপনার নিজ দেশের তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে আপনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিন।

 

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে আমার কখন দেখা করা উচিত?

যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে দেখা করা উচিত। তবে, গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কমপক্ষে একবার দেখা করার জন্য সময় নির্ধারণ করা উচিত। আপনার নিজ দেশে পরামর্শের জন্য, অনুগ্রহ করে আপনার দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে যোগাযোগ করুন। 

যেসব বিষয়ে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে 

যেহেতু প্রত্যেক নারীর গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা ভিন্ন, সেহেতু নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে কথা বলতে হবে:

  • মারাত্মক খিল ধরা
  • ৩৮ (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে জ্বর
  • দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব
  • প্রস্রাবে যন্ত্রণা
  • যোনিপথে রক্ত বের হওয়া
  • মারাত্মক বমি-বমি ভাব

আরও থাকছে…

গর্ভাবস্থায় আপনার ছোট্ট শিশুর সাথে একসাথে বেড়ে ওঠার জন্য ৪০ সপ্তাহের নির্দেশিকা।

গর্ভাবস্থায় আপনার ছোট্ট শিশুর সাথে একসাথে বেড়ে ওঠার জন্য ৪০ সপ্তাহের নির্দেশিকা।

গর্ভাবস্থার ৪০ সপ্তাহ প্রতিটি মা ও তার অনাগত সন্তানের জন্য বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত শিশুর...